নিয়মিত জানাযার নামাজ না পড়ার কারণে
অনেকেই নামাজের নিয়ম ঠিক মত জানেন না।
তাই তাদের জন্য এটা শেয়ার করা হল।
মৃত ব্যক্তিকে গোসল করিয়, কাফন পরিয়ে
তার মাগফিরাত ও পরকালে মুক্তির জন্য
কতক লোক একত্র হয়ে যে নামায পড়তে হয়,
তাকে জানাযার নামায বলে।
এই নামায
মুসলমানদের উপর ফরযে কেফায়া অথাৎ
জানাযার সংবাদ শ্রবণকারী সকল লোকের
পক্ষ হতে ১ জন নামাজ আদায় করলে তা সকলের ফরয আদায় হয়ে যাবে, আর কেউ-ই
আদায় না করলে প্রত্যেককেই গুনাহগার
হতে হবে।
লাশকে গোসল করিয়ে কাফন পরিয়ে একটি
প্রশস্ত পবিত্র স্থানে খাটলির উপরে উত্তর
শিয়রী করে শয়ন করাবে; তারপর মৃতের
যাবতীয় ঋণ ও দেনা ইত্যাদির ব্যপারে সকল মানুষের কাছে তা শোধ বা মাফ
করিয়ে তার সন্তান বা অন্য কোন আলেম নামাযের ইমামতী করতে মৃতকে
সামনে রেখে তার বক্ষ বরাবর দন্ডায়মান
হবে।
লাশের সন্তান নিজে ইমামতী না
করিলে তার অনুমতিক্রমে অন্য কোন
পরহেজগার আলেম ব্যক্তি ইমাম নিযুক্ত হইবেন।
এই
নামায দাঁড়িয়ে আদায় করিতে হয়, এতে
কোন রুকু সিজদা বা বৈঠক ইত্যাদি নেই। এই
নামায বসে পড়িলে শুদ্ধ হবে না।
জানাযার নামাজ সর্বমোট ৪ তাকবীরে পড়তে হয়।
১ম তাকবীর
ইমাম ও মোক্তাগিণ একই সঙ্গে নিয়া কাঁধ
পর্যন্ত হাত উঠিয়ে তাকবীরে তাহরীমা (আল্লাহু আকবার)
বলে হাত বাঁধবে।
এর পর ক্রমান্বয়ে আর
ও অতিরিক্ত তিনটি তাকবীর বলতে হবে,
তবে তাতে হাত উঠাতে হবে না, বরং
তাহরিমা (হাত বাধাঁ) অবস্থায় থাকবে।
তাকবীর
ইমাম শব্দ করে উচ্চারণ করবে, আর
মোক্তাদিরা চুপে চুপে বলবে।
অতিরিক্ত ৪ টি তাকবীর বলার নিয়ম এইরূপ।
প্রথম তাকবীর (আল্লাহু আকবার) অর্থাৎ তাকবীরে তাহরীমা (পেটে হাত) বাধার পরে
প্রত্যেকে (চুপে চুপে) ছানা পাঠ করবে।
বিঃদ্রঃ সুদু ১ম তাকবীর বলার পর হাত বেধে নিবে, পরবর্তী ৩ টা তাকবীরে হাত ওঠানো, নামানো, বা কোনো কিছুই করা লাগবে না। বরং হাত বাধা অবস্তাতেই বাকি ৩ টা তাকবীর বলা সম্পুর্ন করবে। ছানা পাঠ যেমন:-
ﺳُﺒْﺤَﺎﻧَﻚَ ﺍَﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﻭَﺑِﺤَﻤْﺪِﻙَ ﻭَﺗَﺒَﺎﺭَﻙَ ﺍﺳْﻤُﻚَ ﻭَﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﺟَﺪُّﻙَ ﻭَﺟَﻞَّ ﺛَﻨَﺎﺀُﻙَ ﻭَﻻَ
ﺍِﻟَﻪَ ﻏَﻴْﺮُﻙَ -
উচ্চারণঃ সুবহা-নাকা আল্লাহুম্মা ওয়া
বিহামদিকা, ওয়া তাবারা কাসমুকা ওয়া
তায়ালা জাদ্দুকা, ওয়া জালল্লা ছানাউকা
ওয়া লা-ইলাহা গাইরুকা।
অনুবাদঃ হে আললাহ আমরা তোমার
পবিত্রতার গুণগান করিতেছি। তোমার নাম
মঙ্গলময় এবং তোমার স্তুতি অতি শ্রেষ্ঠ, তুমি
ব্যতীত আর কেহই উপাস্য নাই।
তারপর ২য় তাকবীর বলে (চুপে চুপে) দুরুদ পাঠ
করবে (তাশহাহুদের পরে যে দরূদ পড়তে হয়)। যেমন:-
ﺍَﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺻَﻞِّ ﻋَﻠَﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺍَﻝِ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻛَﻤَﺎ ﺻَﻠَّﻴْﺖَ ﻋَﻠَﻰ ﺍِﺑْﺮَﺍﻫِﻴْﻢَ
ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺍَﻝِ ﺍِﺑْﺮَﺍﻫِﻴْﻢَ ﺍِﻧَّﻚَ ﺣَﻤِﻴْﺪٌ ﻣَّﺠِﻴْﺪٌ - ﺍَﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺑَﺎﺭِﻙْ ﻋَﻠَﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻭَﻋَﻠَﻰ
ﺍَﻝِ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻛَﻤَﺎ ﺑَﺎﺭَﻛْﺖَ ﻋَﻠَﻰ ﺍِﺑْﺮَﺍﻫِﻴْﻢَ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺍَﻝِ ﺍِﺑْﺮَﺍﻫِﻴْﻢَ ﺍِﻧَّﻚَ ﺣَﻤِﻴْﺪٌ
ﻣَّﺠِﻴْﺪٌ
উচ্চারনঃ আললাহুম্মা সাললিআলা মুহাম্মাদিঁ
ওয়া আলা আলি মুম্মাদিন কামা সাললাইতা
আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা
ইন্নাকা হামিদুম্মাজীদ। আললাহুম্মা বারিক
আলা মুহাম্মাদিঁ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন
কামা বারাকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা
আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ।
অনুবাদঃ যে আললাহ! মুহাম্মদ (সাললাললাহু
আলাইহি ওয়া সাললাম) এবং তাঁহার
বংশধরগণের উপর ঐরূপ আশীর্বাদ অবতীর্ণ কর
যেইরূপ আর্শীবাদ হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এবং
তাঁহার বংশধরগণের উপর অবতীর্ণ করিয়াছ।
নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসা ভাজন এবং মহামহিম।
হে আললাহ! মুহাম্মদ (সাললাললাহু আলাইহি
ওয়া সাললাম) এবং তাঁহার বংশধরগণের উপর
সেইরূপ অনুগ্রহ কর যেরূপ অনুগ্রহ ইব্রাহীম (আঃ)
এবং তাঁহার বংশধরগণের উপর করিয়াছ।
নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসা ভাজন এবং মহামহিম।
তারপর তৃতীয় তাকবীর বলে জানাযার দোয়া পড়তে হবে, যেমন:-
ﺍَﻟَّﻬُﻢَّ ﺍﻏْﻔِﺮْﻟِﺤَﻴِّﻦﺍَ ﻭَﻣَﻴِّﺘِﻨَﺎ ﻭَﺷَﺎﻫِﺪِﻧَﺎ ﻭَﻏَﺎﺋِﺒِﻨَﺎ ﻭَﺻَﻐِﻴْﺮِﻧَﺎ ﻭَﻛَﺒِﻴْﺮِﻧَﺎ ﻭَﺫَﻛَﺮِﻧَﺎ
ﻭَﺍُﻧْﺜَﺎ ﻧَﺎ ﺍَﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﻣَﻦْ ﺍَﺣْﻴَﻴْﺘَﻪ‘ ﻣِﻨَّﺎ ﻓَﺎَﺣْﻴِﻪِ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻻِْﺳْﻼَﻡِ ﻭَﻣَﻦْ ﺗَﻮَﻓَّﻴْﺘَﻪُ ﻣِﻨَّﺎ
ﻓَﺘَﻮَﻓَّﻪُ ﻋَﻞَ ﺍﻻِْﻳْﻤَﺎﻥِ ﺑِﺮَﺣْﻤَﺘِﻚَ ﻳَﺎ ﺍَﺭْﺣَﻢَ ﺍﻟﺮَّﺍﺣِﻤِﻴْﻦَ -
<
উচ্চারণঃ আললাহুম্মাগফিরলি হাইয়্যেনা ওয়া
মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহীদিনা ওয়া গায়িবিনা
ও ছাগীরিনা ও কাবীরিনা ও যাকারিনা ও
উনছানা। আললাহুম্মা মান আহইয়াইতাহু মিন্না
ফাআহয়িহি আলাল ইসলামী ওয়া মান
তাওয়াফ ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফ ফাহু
আলাল ঈমান বেরাহমাতিকা ইয়া আর হামার
রাহীমিন।
অনুবাদঃ হে আললাহ্ আমাদের জীবিত ও মৃত
উপস্থিত ও অুপস্থিত বালকও বৃদ্ধ পুরুষ ও
স্ত্রীলোকদিগকে ক্ষমা কর। হে আললাহ!
আমাদের মধ্যে যাহাদিগকে তুমি জীবিত রাখ
তাহাদিগকে মৃত্যু মুখে পতিত কর।
তাহাদিগকে ঈমানের সাথে মৃত্যু বরণ করাইও।
তারপর ৪র্থ তাকবীর বলার পর হাত বাধা অবস্থাতেই ডানে বামে সালাম ফেরাতে হবে।
জানাযা নামাযের নিয়ত (নিয়ত বাংলাতেউ পড়লে কোনো সমস্যা নেই)
ﻧَﻮَﻳْﺖُ ﺍَﻥْ ﺍُﻭَﺩِّﻯَ ﻟِﻠَّﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﺍَﺭْﺑَﻊَ ﺗَﻜْﺒِﻴْﺮَﺍﺕِ ﺻَﻠَﻮﺓِ ﺍﻟْﺠَﻨَﺎﺯَﺓِ ﻓَﺮْﺽُ
ﺍﻟْﻜِﻔَﺎﻳَﺔِ ﺍَﻟﺜَّﻨَﺎﺀُ ﻟِﻠَّﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻭَﺍﻟﺼَّﻠَﻮﺓُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ ﻭَﺍﻟﺪُّﻋَﺎﺀُ ﻟِﻬَﺬَﺍ ﺍﻟْﻤَﻴِّﺖِ
ﺍِﻗْﺘِﺪَﻳْﺖُ ﺑِﻬَﺬَﺍ ﺍﻻِْﻣَﺎﻡِ ﻣُﺘَﻮَﺟِّﻬًﺎ ﺍِﻟَﻰ ﺟِﻬَﺔِ ﺍﻟْﻜَﻌْﺒَﺔِ ﺍﻟﺸَّﺮِ ﻳْﻔَﺔِ ﺍَﻟﻠَّﻪُ ﺍَﻛْﺒَﺮُ -
উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উয়াদ্দিয়া লিললাহে
তায়ালা আরবাআ তাকরীরাতে ছালাতিল
জানাযাতে ফারযুল কেফায়াতে আচ্ছানাউ
লিললাহি তায়ালা ওয়াচ্ছালাতু
আলান্নাবীয়্যে ওয়াদ্দোয়াউ লেহাযাল
মাইয়্যেতি এক্কতেদায়িতু বিহাযাল ইমাম
মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ
শারিফাতি আললাহু আকবার।
অনুবাদঃ আমি আললাহর উদ্দেশ্যে জানাযা
নামাজের চারি তাকবীর ফরযে কেফায়া
কেবলামুখী হয়ে ইমামের পিছনে আদায় করার
মনস্থ করলাম। ইহা আললাহু তায়ালার প্রশংসা
রাসূলের প্রতি দরূদ এবং মৃত ব্যক্তির জন্য
দোয়া (আর্শীবাদ) আললাহ মহান।