Home | Login |
|
Home» | Health Tips |
মাসিক ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড মেয়েদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা মাসিক নিয়মিত ও সঠিকভাবে হওয়ার অর্থ হচ্ছে সে নারী সন্তান ধারণে সক্ষম। এক সময়ে মাসিককে অপবিত্র ও নোংরা বলে মনে করা হত। এই দৃষ্টিভঙ্গী অনেকটা পরিবর্তন হলেও এখনো এ নিয়ে মেয়েদের এবং মায়েদের মধ্যে অনেক ভুল ধারনা বিদ্যমান। এখনো বেশিরভাগ মায়েরা মনে করেন এটা হল শরীরের খারাপ রক্ত, যা যত বেশি বের হয় ততই ভাল।
মাসিকের সময়কাল:
মূলত মাসিক ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড হরমোনের প্রভাব জনিত একটি সাধারণ ঘটনা। সাধারনত ১১ থেকে ১৪ বছর বয়সের মধ্যে প্রত্যেক মেয়েরই মাসিক শুরু হয়ে যায়। সাধারনত এটা ৩-৫ দিন স্থায়ী হয় এবং প্রতিবার ৩০-৮০ মি.লি. রক্ত যায়। নারীদের জীবনে মাসিক ঋতুস্রাব ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত চলতে পারে। তবে ১৫ বছর বয়সের পরও যদি নিয়মিত পিরিয়ড শুরু না হয় তবে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। পিরিয়ড সাধারণত ২৮ দিন থেকে শুরু করে ৩০ বা ৪০ দিন পরপর পর্যন্ত হতে পারে। তবে ২৮ থেকে ৩০ দিন পরপর হওয়াটা স্বাভাবিক। পিরিয়ড যদি অনিয়মিত হয় অর্থাৎ কোনো মাস বাদ চলে যায় কিম্বা ১০ থেকে ২০ দিন পরপর হতে থাকে তাহলে অবহেলা না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
মাসিকের সময় করণীয়:
১. এ সময়ে মেয়েদের পর্যাপ্ত পুস্টিকর খাবার খাওয়া দরকার। যেমন: দুধ, ডিম, শাকসবজি ইত্যাদি খেতে হবে।
২. পরিস্কার পরিছন্নতা বজায় রাখতে হবে।
৩. প্রচুর পরিমানে পানি পান করতে হবে।
৪. অনেক মেয়েরাই এ সময় সাধারণ টুকরা কাপড় ব্যবহার করে থাকেন, যা খুবই অস্বাস্থ্যকর। এ সময় স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করা উত্তম।
৫. ন্যাপকিন ৫-৭ ঘন্টার বেশি রাখা উচিত নয়।
৬. মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা অনুভূত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
মনে রাখতে হবে, অস্বাস্থ্যকরভাবে ন্যাপকিন ব্যবহার করলে ভবিষ্যতে জরায়ুর ক্যান্সারসহ অন্যান্য জটিল রোগের ঝুঁকি বাড়ে। আর এ সময় পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ না করলে দেখা দিতে পারে রক্তস্বল্পতাসহ নানা সমস্যা। তাই পরিবারের নারী সদস্যের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এখন থেকেই সতর্ক হন।
মাসিক কখন শুরু এবং শেষ হয় ?
নারীদের প্রজনন প্রক্রিয়ার কার্যক্রম শুরু হয় সাধারণত: ১০-১৬ বছরের মাঝামাঝি বয়সেই বেশী দেখা যায় তবে ক্ষেত্র বিশেষ কোন কোন মেয়েদের ৯ বছর বয়সে, আবার কারো কারো ও বেলায় বিশেষ করে শীত প্রধান দেশে ১৬ বা তার অধিক বয়সে প্রথম মাসিক হওয়া অবাস্থব কিছু নয় । গড়ে মেয়েদেরই ১২ বছর বয়স থেকেই মাসিক শুরু হওয়ার প্রবনতা বেশী এবং তা চলতে থাকে বয়স ৪৫ থেকে ৫০ পর্যন্ত অর্থাৎ একজন নারী প্রৌরত্বে উপনীত হলে তা বন্ধ হয়ে যায় , যাকে বলা হয় রজ:ক্ষান্তি ( Menopause ) বলা হয় ।
মসিক চক্র বা ঋতুচক্রের প্রক্রিয়া ? ( What is the menstrual cycle? )
মাসিল চক্র বা ঋতুচক্র ( Menstrual cycle) বলতে নারীদেহের ২৮ দিনের একটি পর্যায়ক্রমিক শরীরবৃত্তিয় প্রক্রিয়া বোঝায়। এই চক্র আটাশ দিন পর পর বা তার ২/৩ দিন আগে বা পরেও হতে পারে।
নারীদেহের জননতন্ত্রে জরায়ুর ওপরের দিকে দুই পাশ থেকে দুটি নল চলে গেছে,তাকে বলা হয় ডিম্ববাহীনালি বা ফ্যালোপিয়ান টিউব। আর নিচের দিকে জরায়ুর মুখ ( সারভিক্স ) সংযোজিত হয়ে থাকে যোনিপথের মাধ্যমে দেহের বাইরে উন্মুক্ত হয়ে থাকে । জরায়ুর উপর দিকে ফ্যালোপিয়ান টিউবের শেষ প্রান্তে দুই পাশে থাকে দুটি ওভারি বা ডিম্বাশয়। যার যেকোনো একটি থেকে প্রতি মাসে একটি করে ডিম্বাণু বা ওভাম নির্গত হয়ে ফ্যালোপিয়ান টিউবের মাধ্যমে জরায়ুতে আসে পুরুষের শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হওয়ার জন্য ।
( একজন মহিলা গর্ভবতী হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী মাসিকের শেষ দিন হতে ১৩,১৪,১৫.১৬,১৭ নাম্বার দিন হলেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন ১৩ এবং ১৪ নাম্বার দিন । এ সময় আসে একটি ডিম্বানু ডিম্বাশয় থেকে নির্গত হওয়ার পর ১২ থেকে ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত জীবিত থাকে , গর্ভধারণের লক্ষ্যে এ সময়ের মধ্যে ডিম্বাণুটিকে শুক্রাণুর সাথে মিলিত হলে “সহবাস করলে ” ৮০% বেলায় গর্ভ সঞ্চারিত হওয়ার কথা যদি ঠিক ২৮ দিন পর পর ঋতুচক্র নিয়মিত হয়ে থাকে – তবে যদি কারও কারও ৩/৫ দিন পর হয় সেই হিসেব অতিরিক্ত ৩/৫ দিন যোগ করতে হবে )
এ সময় যদি পুরুষের সঙ্গে যৌনমিলনের মাধ্যমে নারীর জরায়ুতে শুক্র না-আসে এবং এই না-আসার কারণে যদি ডিম্ব নিষিক্ত না হয় তবে তা নষ্ট হয়ে যায় এবং জরায়ুগাত্রের এন্ডমেট্রিয়াম স্তর ভেঙ্গে পড়ে। এই ভগ্ন শ্লেষ্মা ঝিল্লির আবরণে ‘ইসট্রোজেন’ ও ‘প্রজেসটেরোনের’ সম্মিলিত ক্রিয়া শুরু হয়। সেই ঝিল্লির বিবর্তনের ফল এবং তা চক্রাকারে সময় লাগে ২৮ দিন ( ক্ষেত্র বিশেষ , মানসিক, আবহাওয়াগত ,এক্সিডেন্ট, যৌন রোগ, হরমোন অথবা হিমোগ্লোবিনের ভারসাম্যতার কারনে ৩/৫ দিন ব্যাবদান হতে পারে ) । তখন উক্ত মহিলা সহবাস বা অন্য কোন উপায়ে ডিম্বানু শুক্রানুর সাথে মিলন না ঘটিয়ে থাকেন তাহলে তা রক্ত আকারে যোনি পথ দিয়ে বেরিয়ে আসে – আর সম্পূর্ণ এই প্রক্রিয়া কে মাসিল চক্র বা ঋতুচক্র বলে থাকি।
ফিজিওলজি অনুসারে মাসিক চক্র প্রধানত তিনটি পর্বে বিভক্ত করতে পারেন –
১. মিনস্ট্রাল ফেজ ঃ ( মাসিক চলাকালীন সময় থেকে শেষ ) এর স্খিতিকাল হলো পাঁচ থেকে সাত দিন অথবা যাদের পুস্টি অথবা আয়রনের অভাব তাদের বেলায় তিন থেকে চার দিন। এ সময় যোনীপথে রক্তমিশ্রিত রস ক্ষরণ হয়। এতে রক্তের সাথে জরায়ুর অভ্যন্তরীণ অস্খায়ী স্তরের খসে পড়া কোষ কলা এবং কিছু কিছু গ্ল্যান্ডের রস মিশ্রিত থাকে। ( ১- ৭ )
২. প্রলিফেরাটিভ ফেজ : ৮-১০ দিন স্থায়ী হতে পারে। শুধু ইস্ট্রোজেন হরমোনের প্রভাবে এটি হয়। এই সময় জরায়ু নিষিক্ত ডিম্বানুকে গ্রহন করার জন্য প্রস্ততি নেয়। ( ৭-১৬ )
৩. সিকরেটরি ফেজ : সেক্রেটরি ফেজ টা সবচেয়ে দীর্ঘ, প্রায় ১০ থেকে ১৪ দিন। একে প্রজেস্টেরন বা লুটিয়াল ফেজ ও বলা হয়। এটিও ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন উভয় হরমোনের যৌথ কারনে হয়। এই সময় নিষিক্ত ডিম্বানুর বৃদ্ধির জন্য জরায়ু সর্বোচ্চ প্রস্ততি নিয়ে থাকে।ডিম্বাশয়ের কোনো ডিম্বানু শুক্রানু দ্বারা নিষিক্ত না হলে পুনরায় মাসিক শুরু হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয় । ( ১৩/১৭ ) গড়ে ৮ % বেলায় ঋতুচক্রের ১৪ নাম্বার দিন থেকে ১৭/১৮ নাম্বার দিন পর্যন্ত এই ৪/৫ দিন গর্ভ সঞ্ছারের সম্বাভনা সবচেয়ে বেশী ।
মাসিক ঋতুচক্রের জন্য কখন চিকিৎসকের পরামর্ষ নিতে হবে ?
যদি মানসিক এবং শারীরিক সমস্যা শারীরিক অবস্থাকে প্রভাবিত করে এবং একি সাথে মাসিক স্রাবের পরিমাণ বেশী হয় অথবা বেশী দিন হয় অথবা অনেক দেরিতে হয় তাহলে অবশ্যই দ্বিতীয় পর্বের মাসিক চক্রের সময় হাউস ফিজিশিয়ানের পরামর্ষ নেওয়া উচিৎ অথবা তা যদি না করতে পারেন তাহলে ঘরোয়া ভাবে অভিজ্ঞ কারও পরামর্ষে ( বিশেষ করে নিজের মা অথবা সেই ধরণের কেউ ) উপযোক্ত ব্যাবস্তা গ্রহন করলে তার কারন খুঁজে পেতে পারেন । যদি কারন খুঁজে না পান তাহলে তৃতীয় মাসিক চক্রের আগে অবশ্যই সঠিক ডায়াগনোসিস করা উচিৎ বা বিশেষজ্ঞ কে দেখাতে হবে । ( বিঃদ্রঃ সে সময় অনভিজ্ঞ বা কুসঙ্কস্কার জাতীয় আত্মবিশ্বাসী যে কেউ অথবা চিকিৎসা বিজ্ঞানে অভিজ্ঞতা ছাড়া যে কোন পুরুষদের কাছ থেকে থেকে পরামর্ষ না নেওয়াই উত্তম । সৃতি – আমার বাস্থবে শেষ দেখা পর্যন্ত হরমোন জনিত ব্যাঘাত, টিউমার , সিস্ট ইত্যাদি অনেকের ই ধরা পড়েছিল যার মধ্যে সবাই খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে পেরেছেন । )
কি কি কারনে ঋতুচক্র বন্ধ অথবা দেরিতে হতে পারে ?
নিছের ১১ টি কারনে ঋতুচক্র বন্ধ অথবা অনিয়মিত হতে পারে =
গর্ভসঞ্চার ( যদি সহবাস করে থাকেন তাহলে ঋতুচক্র বন্ধ হওয়ার তারিখ থেকে এক সপ্তাহ পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করালে পূর্ণ নিশ্চিত হতে পারেন , তবে সবচেয়ে ভাল হয় ল্যাব্রেটারির মাধ্যমে পরিক্ষা করা । )
মানসিক ভিশন্নতা ঃ যদি মানসিক ভিশন্নতা থাকে তাহলে শরীর থেকে এ্যড্রিনালিন এবং করটিসল হরমোন বেশী উৎপাদিত হয় বিধায় মানসিক ভিশন্নতার কারনে ও ঋতু স্রাব দেরিতে হতে পারে তবে তার সাথে শারীরিক অন্যান্য অসুবিধা বিশেষ করে হটফ্ল্যাস জাতীয় অসুবিধা থাকবে । যেমন মুখ-কান-ঘাড়-মাথা দিয়ে গরম ভাপ বের হয়, রাতে গাঁ ঘামা,শরীর অবসাদবোধ , মাথা ব্যাথা, ওজন হ্রাস, ভ্রুন এবং চরমজাত অন্যান্য অসুখ বিশুখ ইত্যাদি ।
শারীরিক দুর্বলতা এবং পুস্টিজনিত অভাব ঃ শরীর বেশী অসুস্থ থাকলে ডিম্ব অভুলেশন প্রক্রিয়া অংশগ্রহণ করতে বিলম্বিত হওয়ায় ইস্ট্রোন হরমোন কম উৎপাদিত হয় ফলে সময় মত মাসিকস্রাব হতে বিলম্বিত হতে পারে অথবা রক্তে আয়রনের অভাবে ও তা হতে পারে ।
ওজন ঃ খুব বেশী ওজন বেড়ে যাওয়া অথবা হঠাৎ করে ওজন কমানোর কারন মস্তিষ্কের হাইপো-থ্যালামাস খুব বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় ঠিক মত হরমোন সমুহ নিঃসরণ করতে পারেনা বিশেষ করে হঠাৎ ওজন হ্রাস করলে জরায়ুর পাথলা আবরণী সমুহ সংকোচিত বা ছোট হয়ে পরে এবং তা থেকে ইস্ট্রোজেনের উৎপাদন ক্ষ্যামতা মারত্তক ভাবে হ্রাস পাওায়ায় ঋতুস্রাব হতে বিলম্বিত হতে পারে । একি সাথে কাজ, অতিরিক্ত ব্যায়াম, ও পরিবেষ পরিবর্তনের ফলে ও হতে পারে ।
বুকের দুধ বাচ্চাকে সেবন করালে ঃ রিসার্চ- এখানে অবশ্যই জেনে রাখা দরকার, ১০% দুধ দাতা মায়েদের ক্ষেত্রে খুব অল্প লিকিং স্রাব হয়েই আবার গর্ভ সঞ্চার হওয়ার সম্বাভনা আছে, যার ফলে এ রকম কিছু মনে করলে ৩ সপ্তাহের ভিতর প্রেগ্ন্যান্সি টেস্ট করে নেওয়া ভাল – অথবা যদি পুনরায় সন্তান নেওয়া ইছছা থাকে তাহলে ৩ মাস পর দেখবেন বুকের দুধ বন্ধ হয়ে গেছে অর্থাৎ প্রলেক্টিন হরমোন আর উৎপাদিত হচ্ছেনা
বিভিন্ন ঔষধ সেবনের ফলে ঃ জন্ম নিয়ত্রন বড়ি দীর্ঘদিন সেবন অথবা এর ভুল ব্যাবহার অথবা ইমারজেন্সি জন্ম নিয়ত্রন বড়ি সেবন ইত্যাদি ( রিসার্চ – যারা জন্ম নিয়ত্রন বড়ি সেবন করেন তারা যদি পুনরায় সন্তান নেওয়ার ইছছা থাকে তাহলে সন্তান নেওয়ার ৬/৮ সপ্তাহ আগে বড়ি ত্যাগ করে কনডম বা ঐ জাতীয় কিছু ব্যাবহার করে অন্তত একটি বা দুটি মাসিক চক্রের অপেক্ষা করার পর সন্তান জন্ম নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়াই ভাল বা এতে সন্তানের জেনেটিক ক্যামজিন সংমস্রিত হওয়ার সম্বাভনা কম থাকবে অর্থাৎ আপনার সন্তানের ইমিউনিটি শক্তি অথবা জীর্ণতা জাতীয় অসুখে কম আক্রান্ত হবে ।। ) কিছু কিছু অন্যান্য ঔষধ যেমন ঘুমের বড়ি বা ঐ জাতীয় ট্রাঙ্কুলাইজার জাতীয় ঔষধ, করটিকস্টায়েড বা ক্যাম্থ্যারাপি ড্রাগস দীর্ঘদিন সেবন ঋতুস্রাব বন্ধ অথবা অনিয়মিত হতে পারে ।
হরমোনের ভারসাম্য জনিত কারনে ঃ যেমন পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম বা ওভারিতে সিস্ট ( পরবর্তী পর্বে জানতে পারবেন ) ইত্যাদি কারনে ।
থায়রয়েড গ্রন্থির গোলাযোগের কারনে ঃ মুলত থায়রিয়েড গ্রন্থিরস সমুহ বডি ম্যাটাবলিজম প্রক্রিয়া ( হজম প্রক্রিয়া ) সঠিক ভাবে পরিচালনা করে থাকে, যদি কোন কারনে তা ঠিকমত কাজ না করে তাহলে ঋতুস্রাবের অনিয়ম অথবা বন্ধ হতে পারে কেননা ইহা জিটি এইচের সাথে সম্পর্কযুক্ত ।
প্যারিমেনোপোজ ঃ অর্থাৎ যিনি মেনোপোজের ( স্থায়ী ভাবে ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়া ) কাছি কাছি সময়ে চলে এসেছেন ( সাধারণত ৪০ বছরের পরই তা হয়ে থাকে ) তবে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন ড্রাগস আবিষ্কৃত হওায়ায় অনেকের বেলায় তা ৫/১০ বছর বৃদ্ধি করা যায় — বিস্তারিত পরবর্তী পর্বে খুঁজ করুন —
কি কি কারনে ঋতুস্রাব বৃদ্ধি বা অতিরিক্ত হতে হতে পারে ? ( অস্বাভাবিক ঋতুস্রাব )
এ ধরনের অস্বাভাবিকতাকে আমরা প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করতে পারি। একটি হচ্ছে জননতন্ত্রের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গের শারীরবৃত্তিক অসুবিধা, যেমন :প্রদাহ,টিউমার অথবা ক্যানসার। আর অন্যটিকে আমরা বলতে পারি ডিসফাংকশনাল ইউটেরাইন ব্লিডিং, ইত্যাদি যা শারীরবৃত্তিক কোনো অসুবিধা থাকে না বরং সমস্যা থাকে ঋতুচক্রের কার্যকলাপে। এ ক্ষেত্রে নিয়মিত ঋতুস্রাবের ব্যাঘাত ঘটে এবং রক্তপাত হয় প্রচুর পরিমাণে।
মহিলা হরমোনের ভারসাম্যতা জনিত কারন ঃ
মুলত ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টারন হরমোন দুটি জরায়ুর ইন্দড়োমেট্রিয়াম স্থর বা লাইনার সমূহকে নিয়মিত তৈরি করে থাকে যদি কোন কারনে সেই স্থর সমুহ বেশী বৃদ্ধি করে তাহলে অতিরিক্ত ঋতুস্রাব হতে পারে । যদি ও সে ক্ষেত্রে জননতন্ত্রের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ সুস্থই থাকে, কিন্তু হরমোনের বিশৃঙ্খলার জন্য মাসিক অনিয়মিত হয়ে যায়। মেয়েদের মাসিক শুরু হওয়ার সময় অথবা পরে রজঃনিবৃত্তি বা মেনোপজের প্রাক্কালে এ ধরনের রক্তক্ষরণ খুবই সাধারণ ঘটনা। আর এর কারণ হচ্ছে এ সময় হরমোনের সঠিক অনুপাতে নিঃসরণ না হওয়া। রোগীর মানসিক অবস্থার সঙ্গেও এটা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মানসিক চাঞ্চল্য বা উত্তেজনা, ইত্যাদি এ ধরনের অতিরিক্ত রক্তপাত ডেকে আনে।
ডিম্বাশয় বা ওভারির অকার্যকারীতা ঃ
যদি কোন কারনে ডিম্বাশয় ডিম্ব উৎপাদন না করে তাহলে অতিরিক্ত ঋতুস্রাব হতে পারে । মুলত শরীর থেকে প্রজেস্টারন উৎপাদিত না হওয়ায় তা হয়ে থাকে যার পরিনিতি দীর্ঘ স্থায়ী ম্যানোরেজিয়াতে চলে যায় — বিস্তারিত ম্যানোরেজিয়া পর্বে দেখুন ।
জরায়ুর ফাইব্রয়েড বা মায়োমা ঃ
ইহা একধরণের জরায়ুর টিউমার জাতীয় মাংসপেশির বৃদ্ধি মনে করতে পারেন যা জরায়ুর পেশির অতিরিক্ত ও অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে এই টিউমারের সৃষ্টি হয় এবং ৩০ বছরের ঊর্ধ্বে নারীদের মধ্যেই বেশী দেখা যায় । বিস্তারিত জরায়ুর ফাইব্রয়েড পর্বে দেখুন ।
সার্ভাইকাল পলিপ এবং জরায়ুর পলিপ ঃ
সাধারণভাবে জরায়ুর নিচের অংশটিই সার্ভিক্স নামে পরিচিত। আর সার্ভাইকাল পলিপ হচ্ছে সার্ভিক্সে এক ধরনের রক্তনালিময় বৃদ্ধি। এ ক্ষেত্রে একটা নিয়মিত ব্যবধানে অল্প পরিমাণে রক্তপাত হয়। এই টিউমারের ওপর যেকোনো ধরনের চাপ, বিশেষত যৌনসঙ্গম অথবা মলমূত্র ত্যাগের সময় সামান্য চাই রক্তপাত ঘটায়। চিকিৎসা খুবই সহজ। ছোট্ট একটা অপারেশনের মাধ্যমেই এই টিউমার উচ্ছেদ করা যায় এবং খুব কম ক্ষেত্রেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হয় তবে জরায়ুর ভিত বা দেওয়ালে পলিপ হলে মেজর অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে ।
এডিনোমাইওসিস ( Adenomyosis ) ঃ জরায়ুর এন্ডমেট্রিয়াল স্তরে এক ধরণের মাংসপেশি বিশেষ বেড়ে যাওয়া কেই বুজায় যার ফলে সেই মাংসপেশি দিয়ে রক্ত ঠিক মত প্রবাহিত হতে পারেনা । ল্যাপারোস্কোপির মাধ্যমে তা নির্মূল করা সম্বভ ।
গর্ভপাত ঃ গর্ভপাত করালে অথবা মিস এভরশন হলে জরায়ুর ভিতর কিছু থেকে গেলে ( সে জন্য গর্ভপাত হলে অবশ্যই দক্ষ হাতে ডি এন সি করানো উচিৎ ) অথবা জরায়ুতে কপার টি (IUCD) ধারণ করলে (জন্ম নিয়ন্ত্রণকারী ডিভাইস)।
ক্যানসার ঃ জরায়ু, জরায়ুর মুখ ( সারভিক্স ) ওভারি অথবা ওভারির নালীতে ক্যানসার জাতীয় কিছু হলে
উইলিব্র্যান্ড ডিজিজ ( রক্ত জমাট বাঁধতে না পারা ) অথবা রক্ত পাতলা করে এমন ধরণের ঔষধ সেবনে – যেমন এস্পিরিন ইত্যাদি (anticoagulants ) নানা কারনে জরায়ু থেকে বেশী রক্ত যেতে পারে ।
আপনি যখন একবার নিশ্চিত হয়ে যাবেন যে আপনার এই তিব্র ব্যাথা কোন রোগের কারণে হচ্ছে না, তখন আপনি এই ব্যাথা কমানোর জন্য প্রাকৃতিক বা ভেষজ উপায় অবলম্বন করতে পারবেন। কিছু কিছু ঘরোয়া প্রতিকার, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন ও ব্যায়াম আছে যা আপনার এই তীব্র ব্যাথা কমাতে সাহায্য করবে।
মাসিকের সময় নিজের যত্ন কীভাবে করবেন ঃ ( সংগৃহীত )
ক্যালেন্ডার অথবা ডায়েরীতে মাসিক শুরু বা শেষ হবার তারিখ এবং মাসিক পূর্ব সিনড্রম-এর উপসর্গগুলো লিখে রাখতে হবে
স্যানিটারি ন্যাপকিন/ প্যাড, কাপড় ব্যবহারের সময় নিচের বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে :সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য প্যাড বা কাপড় পরিবর্তনের আগে ও পরে ভালোমত হাত পরিষ্কার করতে হবে, প্রতি তিন বা চার ঘন্টা পর প্যাড পরিবর্তন করতে হবে, প্যাডটি অথবা কাপড়টি ভালো করে মুড়ে আবর্জনার মধ্যে ফেলতে হবে। টয়লেটের মধ্যে ফেললে সুয়ারেজ লাইন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ
মাসিকের সময় সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করতে হবে যেমন :শর্করা সম্বলিত-শস্য, ডাল, শাকসবজি, দই, আলু খেতে হবে, আমিষ জাতীয় খাদ্য যেমন : দুধ, ডিম, বাদাম, মাছ ও মাংস খেতে হবে, আয়রণ বা লৌহ জাতীয় খাদ্য যেমন-ডিম, সিম, পালংশাক, আলু, কলা, আপেল, গুড়, খেজুর, কালোজাম ইত্যাদি খেতে খেতে হবে, ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্য যেমন-বাদাম, সয়াবিন, গাঢ় সবুজ শাকসবজি খেতে হবে, ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার-দুগ্ধজাত খাবার, দুধ, ডিম, বাদাম (Almond), এবং সয়াবিন খেতে হবে, কম লবণযুক্ত খাবার খেতে হবে, তাজা ফলের রস পান করতে হবে এবং অতিরিক্ত চা-কফি পান থেকে বিরত থাকতে হবে, প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে ।
ত্বকেরযত্নে করণীয়
ত্বকের মরা কোষ, ঘাম ও ক্ষতিকর জীবাণু থেকে রক্ষার জন্য দিনে অন্তত দুইবার ভালো সাবান দিয়ে মুখ ধুতে হবে . .
তলপেট ব্যথা হলে করণীয়
সুত্র অনুসারে তলপেটের রক্তের শিরাগুলো সংকুচিত না থেকে বড় হয় এমন ধরণের কিছু করলে রক্তসঞ্চালন ভালো হবে। যেমন তলপেটে এবং পিঠে গরম পানির বোতল ধরে রাখা, তলপেটে হালকা মেসেজ করলে ব্যথা কমে যাবে, হালকা ব্যায়াম করা ইত্যাদি
সেই সাথে গরম তরল খাবার – যেমন গরম দুধ, গরম সুপ ইত্যাদি আহার করুন – জরায়ু বা তলপেটে চাপ লাগে এমন কিছু না করা সহ বেশী করে পানি পান করুন —–।
যদি অসহ্য ব্যাথা ( ডিসম্যানোরিয়া ) হয় তাহলে এনালজ্যাসিক ট্যাবলেট ( প্যারাসেটামল, আইব্রোফেন ইত্যাদি ) সেবন করতে পারেন । রিসার্চ ঃ ডিসম্যানোরিয়া জাতীয় ব্যাথা বেশী না হলে অল্প বাথাতে যে কোন ধরণের ব্যাথা নাশক ঔষধ সেবন করা উচিৎ নয় অথবা যদি সেবন করেন তাহলে নিয়মিত প্রতি চক্রের সময় সেবন করে অভ্যস্থতায় পরিণত না হয় সে দিকে খেয়াল রাখবেন । অথবা আপনার হাউস ফিজিশিয়ানের পরামর্শ মতো পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ব্যথার কারণ নির্ণয় ও সেই অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে পারেন —